মুজিব শতবর্ষ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে শুধু উদযাপনই নয়, বরং দেশের মানুষের জন্য এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে থাকছে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা।
এরইমধ্যে কিছু কিছু বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গবেষণা ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে জানা গেছে, জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া ভাতার পরিমাণ বাড়াবে। বর্তমানে দেশের এক লাখ ৮৯ হাজার ৩১১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানী ভাতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত বছরগুলোতে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতার পরিমাণ বেশ কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে মাসিক ১২ হাজার টাকা সম্মানী ভাতাসহ দুটি উৎসব ভাতা ১০ হাজার টাকা হারে দেওয়া হচ্ছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এর পরিমাণ বাড়ানো যায় কিনা তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।’
তিনি জানান, ‘গত অর্থবছর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার পাশাপাশি বাংলা নববর্ষ ভাতা বাবদ জনপ্রতি ২ হাজার টাকা এবং ভাতাপ্রাপ্ত জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের মহান বিজয় দিবস ভাতা ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ৬৮ হাজার ৩৮টি গ্রামে একটি করে দুস্থ ও দরিদ্র পরিবারকে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা ব্যয়ে একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য দুই বছরে বরাদ্দ প্রয়োজন দুই হাজার ৪০ কোটি ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮০ টাকা।
এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ‘চলতি অর্থবছর থেকেই আমরা এ কর্মসূচি শুরু করতে চাই। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির বিশেষ বরাদ্দ বাতিল করে ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণ খাতে ৮৯৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা স্থানান্তরের একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি জানান, মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ৬৮ হাজার ৩৮টি গ্রামে একটি করে মোট ৬৮ হাজার ৩৮টি দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি দুস্থ ও দরিদ্র পরিবারের মধ্যে বিতরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ অনুযায়ী প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সহজ হবে।
এদিকে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীতে দুই লাখ প্রশিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীকে জামানত ছাড়াই পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কর্মসংস্থান ব্যাংক। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষায়িত ব্যাংকটি মূলধনের সরকারি অংশের ১৩৫ কোটি টাকা চেয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। অর্থ সচিবের কাছে এ টাকা ছাড়ের বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চেয়ে তৃতীয়বারের মতো গত ২৭ জানুয়ারি চিঠি দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। চিঠিতে বলা হয়, কর্মসংস্থান ব্যাংক আইনের ৭ (১) ধারা মোতাবেক পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে সরকার কর্তৃক অপরিশোধিত ১৩৫ কোটি টাকা ছাড়করণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মগ্রহণের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন শুরু হবে চলবে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, ‘ব্যাপকভাবে পালিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পৃথক কর্মসূচি নিয়েছে। এসব কর্মসূচি পুরোটাই দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য। কারণ, বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন সাধারণ মানুষের কথাই ভেবেছেন এবং জীবন দিয়েছেন।’
।
সুত্র : বাংলা ট্রিবিউন